পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন
সরকার গঠনের পথে নওয়াজ শরিফ ও বিলাওয়াল ভুট্টোর দল
পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচনের চারদিন পর প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে বিজয়ী প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল। বৈঠক শেষে দুই পক্ষের মধ্যে মতৈক্য হয়েছে বলে যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
গতকাল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল লাহোরে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির বাসভবনে যায়। সেখানে দুই পক্ষ দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে।
দুই দলের শীর্ষ নেতারা রাজনৈতিক সমঝোতার বিষয়ে একমত হয়েছেন উল্লেখ করে পিএমএল-এন ও পিপিপির যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পিএমএল-এন প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ও কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারির সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
সরকার গঠনে তাদের সহযোগিতা চেয়েছেন শাহবাজ শরিফ। জবাবে পিপিপি নেতৃত্ব পিএমএল-এন নেতাদের বলেছেন, প্রস্তাবটি নিয়ে তাদের দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করা হবে। সোমবার এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র এক বিজয়ীর পিএমএল-এনে যোগ দেয়ার খবর পাওয়া গেছে।
যদিও পিটিআই নেতা ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভী গণরায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। পিটিআই নেতারা বলছেন, সর্বোচ্চসংখ্যক আসনে বিজয়ী হওয়ায় সরকার গঠনের জন্য প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে ডাক পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তারা।
মুসলিম লিগ চাইছে, তাদের নেতৃত্বে একটি জোট সরকার গঠন করা হবে এবং এ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন দলটির নেতা নওয়াজ শরিফ। এর আগে পিপিপির পক্ষ থেকে মুসলিম লিগকে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল, জোট সরকারে আপত্তি না থাকলেও প্রধানমন্ত্রিত্বের বিষয়ে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয় তারা। গতকালের বৈঠকের পর কে প্রধানমন্ত্রী হবেন তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
এর আগে ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, মুসলিম লীগের তরফে পিপিপিকে প্রেসিডেন্ট, স্পিকার ও সিনেট চেয়ারম্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে রাজি হয়নি দলটি।
জোট সরকার গঠনে মুসলিম লীগের সঙ্গে দরকষাকষির বিষয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সঙ্গে কথা বলেছেন পিপিপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হায়দার জামান কোরেশি। নওয়াজ শরিফের দলের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে পিপিপির অতীত অভিজ্ঞতা অত্যন্ত তিক্ত। সরকার পরিচালনা ও দেশের অর্থনীতি সামাল দেয়ার বিষয়ে দুই দলের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য রয়েছে।
পিপিপির আরেক নেতা ফয়সাল করিম কুন্দি বলেছেন, ‘একটি স্থিতিশীল জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হতে না পারলে দলের চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির উচিত হবে বিরোধী দলের আসনে বসা।’
বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ২৬৬ আসনের পার্লামেন্টে সর্বোচ্চ ৯৩টি আসনে বিজয়ী হয়েছেন পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। মুসলিম লিগ ও পিপিপি পেয়েছে যথাক্রমে ৭৪ ও ৫৪টি আসন। বাকিগুলোয় বিজয়ী হয়েছে অন্যান্য দল ও অন্য স্বতন্ত্ররা।
তবে পিটিআইয়ের দাবি, ৯৩ নয়, প্রকৃতপক্ষে ১৭০টি আসনে বিজয়ী হয়েছেন তাদের সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কিন্তু কারচুপির মাধ্যমে তাদের আসন সংখ্যা কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
‘ভোট চুরির’ অভিযোগে গতকাল দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দেয় পিটিআই। পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বিভিন্ন জায়গায় রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেয় তারা।
এসব কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে করাচি, লাহোর, রাওয়ালপিন্ডিসহ বিভিন্ন স্থানে ধরপাকড়ের শিকার হয় পিটিআই সমর্থকরা। রাজধানী ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
ইমরান খানের উপদেষ্টা জুলফি বুখারি বলেছেন, ‘পার্লামেন্টে এককভাবে সর্বোচ্চসংখ্যক আসনে বিজয়ী হয়েছেন পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্ররা। এছাড়া অনেক আসনের ফল চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
আদালত এসব চ্যালেঞ্জ যথাযথ পর্যালোচনা করলে আর জোট সরকার গঠনের প্রয়োজন হবে না। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই সরকার করতে পারবে পিটিআই।’