বিদেশি ফলের দাম ঊর্ধ্বমুখী
রোজার আগেই খেজুরের বাজার উত্তপ্ত
পবিত্র রমজান ঘিরে এবার বেশ আগেভাবে বেড়েছে খেজুরের দাম। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মারিয়াম খেজুরের দাম পড়ছে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা, মাবরুম ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, মেডজুল ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, দাবাস ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি।
আজোয়া মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা কেজি। বাজারে আরও উচ্চ মূল্যের খেজুর আছে। সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে জাহিদি খেজুর, দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি। গত বছরের তুলনায় সব ধরনের খেজুরের দাম কেজিতে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়েছে।
বাদামতলীর আমদানিকারক মো. কামরুজ্জামান বলেন, খেজুর আমদানিতে খরচ যতটা বেড়েছে, তার থেকে বেশি বেড়ে যাচ্ছে শুল্কের প্রভাবে।
কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর খেজুর আমদানিতে অগ্রিম আয়কর ও অগ্রিম কর মিলিয়ে ১০ শতাংশ শুল্কহার ছিল। অর্থাৎ ১০০ টাকার খেজুর আমদানি করলে শুল্ক-কর দিতে হতো ১০ টাকা।
চলতি অর্থবছরে সেই শুল্কহার বেড়েছে। বর্তমানে খেজুরে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ও ৫ শতাংশ অগ্রিম কর রয়েছে।
বাজারে আরও উচ্চ মূল্যের খেজুর আছে। সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে জাহিদি খেজুর, দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি। গত বছরের তুলনায় সব ধরনের খেজুরের দাম কেজিতে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়েছে।
এছাড়াও এখন খুচরা বাজারে বাড়ল আপেল, কমলা ও মাল্টার মতো বিদেশি ফলের দাম। আমদানি করা এসব ফলের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকা। দাম বাড়ার জন্য বাড়তি দরে শুল্কায়ন ও ডলার–সংকটকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে বাজারে দেশি ফলের সরবরাহ ভালো। আনারস, কলা, পেয়ারা, বরইয়ের মতো ফলের সঙ্গে তরমুজও বাজারে আসতে শুরু করেছে।
রাজধানীর শাহজাহানপুর, মালিবাগ, মগবাজার ও কারওয়ান বাজারের ফল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে খুচরা পর্যায়ে বিদেশি ফলের দাম বেড়েছে। কেজিতে মাল্টার দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। বাজারে দেশি মাল্টার সরবরাহ কম, তাতে ২২০ টাকা কেজির আমদানি করা মাল্টা কিনতে হচ্ছে ২৭০ টাকা কেজি। কোথাও কোথাও দাম আরও বেশি চাওয়া হচ্ছে।
দেশি কমলার দাম পড়ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। আমদানি করা কমলার দাম ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। কমলার দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রমজানে খেজুরের পাশাপাশি মাল্টার চাহিদা বেশি থাকে। ঠিক রমজানের আগেই বেড়েছে এই ফলের দাম। আপেল ও কমলার দামও বেড়েছে। আপেলের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা। বাজারে সবুজ আপেল বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগেও যা ৩০০ টাকার নিচে ছিল। লাল আপেলের দুটি পদ। সপ্তাহখানেক আগেও ২৫০ টাকার আশপাশে দাম ছিল, এখন তা কিনতে হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজিতে।
দেশি কমলার দাম পড়ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। আমদানি করা কমলার দাম ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। কমলার দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা। আনারের কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। দাম কিছুটা স্থিতিশীল আছে আঙুরের। বাজারে এখন দুই পদের আঙুর পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে সবুজ আঙুরের দাম ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। আর ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে কালো আঙুর।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রমজানে খেজুরের পাশাপাশি মাল্টার চাহিদা বেশি থাকে। ঠিক রমজানের আগেই বেড়েছে এই ফলের দাম।
কারওয়ান বাজারের মায়ের দোয়া ফল বিতানের বিক্রেতা মিন্টু আহমেদ বলেন, পাইকারি বাজারে ফলের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। তবে সরবরাহ ভালো।
ডলার-সংকটের কারণে এমনিতে বিদেশ থেকে ফল আমদানিতে নিরুৎসাহিত করে আসছে সরকার। এরপরও রমজান উপলক্ষে খেজুরসহ অন্যান্য বিদেশি ফল আমদানিতে জোর দিয়েছেন আমদানিকারকেরা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) খেজুরসহ বিদেশি ফলের ক্ষেত্রে অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু (সর্বনিম্ন আমদানি মূল্য) বাড়িয়ে ধরছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুল করিম বলেন, সরকার খেজুরের দাম কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে ডলারের দাম বেশি। শুল্কায়নের ক্ষেত্রেও কিছু জটিলতা আছে। বাজারে এসবের প্রভাব পড়েছে।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদেশি ফলের আমদানি আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৮ শতাংশ কমে গেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি হয় বিভিন্ন ধরনের ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪ টন ফল। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৮ লাখ ৯ হাজার ৭৯৬ টন। সেই হিসাবে, এক বছরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৭৫২ টন ফল আমদানি কম হয়েছে।