পর্যটকদের টানছে নিঝুম দ্বীপের খেজুর গুড়

টিবিটি ডেস্ক
নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৩৩ এএম

শীতের পিঠা পুলি তৈরিতে খেজুরের গুড়ের জুড়ি নেই। শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে ঘুরতে আসা পর্যটকরা মাতোয়ারা খেজুরের গুড় ও রসে। গাছ থেকেই খেজুরের রস খাচ্ছেন পর্যটকরা। 

পাশাপাশি খেজুরের রস থেকে তৈরি গুড় নিয়ে যাচ্ছেন আত্মীয় স্বজনদের জন্য। সারাদেশে পাঠানো হচ্ছে এখানকার গুড়। গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে রাসায়নিক কোনো দ্রব্য ব্যবহার ছাড়াই গুড় তৈরি করেন এখানকার গাছিরা। দিন দিন বাড়ছে এখানকার খেজুর গুড়ের কদর। 

জানা গেছে, গাছিদের মধ্যে কেউ বংশ পরম্পরায়, কেউবা শীতের মৌসুমে অর্থনৈতিক লাভের আশায় খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি করেন। জেলার প্রতিটি উপজেলায় খেজুরের রস সংগ্রহ করা হলেও সবচেয়ে বেশি গাছ রয়েছে হাতিয়ায়।

সরেজমিনে নিঝুম দ্বীপে গিয়ে দেখা যায়, নিঝুম দ্বীপের প্রতিটি সড়কে সারি সারি খেজুর গাছ। গাছে লাগানো হাড়ি। রাতভর ফোঁটা ফোঁটা রস পড়ে ভর্তি হয় হাড়িগুলো। কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে সেই রস সংগ্রহ করেন গাছিরা। 

গাছিদের সঙ্গে থেকে পরিবারের শিশুরা এগিয়ে দিচ্ছে কলসি-হাড়িগুলো। রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। রস চুলায় জ্বাল দেওয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে লাল গুড় তৈরি হতে। রস জ্বালিয়ে তৈরি করা গুড়ের চাহিদাও অনেক। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৯৯ হেক্টর জমিতে রোপনকৃত খেজুরের গাছ থেকে ৪৯৬ মেট্রিক টন খেজুরের রস সংগ্রহ করেছেন গাছিরা। প্রতি হেক্টর জমির খেজুরের রস থেকে গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ টন করে।

হাতিয়া উপজেলার প্রায় ২৮ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের খেজুর গাছের আবাদ রয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ১০৯৯টি গাছ রয়েছে। প্রতি শীত মৌসুমে গাছিরা এ গাছগুলো থেকে রস সংগ্রহ করে খেজুর গুড় তৈরি  করেন। 

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হিসেবে এই খেজুরের রস ও গুড়ের বেশ চাহিদা রয়েছে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে খেজুর গাছ থাকলেও নিঝুম দ্বীপ ও জাহাজমারাতে সবচেয়ে বেশি রয়েছে। হেক্টর প্রতি ১৬ টন হারে ৪৫০ টন গুড় উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

৩০ বছর ধরে নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মোল্লা গ্রামের সিরাজ উদ্দিন ও তার পরিবার খেজুরের রস ও গুড়ের সঙ্গে জড়িত। ভোর হলেই সিরাজ উদ্দিন গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে চুলায় গরম করেন।


তারপর রস থেকে গুড় হলে তা বিক্রি করেন। সিরাজ উদ্দিনের ছেলে স্বপন উদ্দিন বলেন, আমাদের রসের যে-রকম চাহিদা গুড়েরও সেরকম চাহিদা আছে। 

পর্যটকরা যেমন রস খায় তেমনি গুড় নিয়ে যায়। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারাদেশে আমাদের এই গুড়ের চাহিদা রয়েছে। এছাড়াও শীতের পিঠা তৈরি করে মেহমানদেরকে গুড় ও নারকেল দিয়ে সম্মান করা হয়। 

মো. জসিম উদ্দিন নামের আরেক রস ও গুড় বিক্রেতা বলেন, পর্যটকরা আসার কারণে আমাদের গুড় ও রসের দাম বাড়ছে। ঘুরতে এসে এসব রস ও গুড় তারা তাদের পরিবারের জন্য নিয়ে যায়। তারা গিয়ে যখন আবার এই রস ও গুড়ের কথা বলে তখন নতুন পর্যটকরা এসে এসব সংগ্রহ করে। এসব কারণে আমরা ভালো দাম পাচ্ছি। 

বেলাল আহমেদ নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, আমাদের এই গুড় বাড়িতেই বিক্রি হয়। বেপারীরা আমাদের বাড়িতে এসে তারা নোয়াখালী নিয়ে যায় এবং সেখানে গিয়ে বেশি দামে বিক্রি করে। আমরা কেজি প্রতি ১৫০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি করি।

নিঝুমদ্বীপে ঘুরতে আসা রাজু আহমেদ বলেন, আমরা নিঝুমদ্বীপ ঘুরতে আসছি। আমাদের পরিবারের জন্য গুড় নিয়েছি ১৪ লিটার, মধু নিয়েছি ১ লিটার আর রস নিয়েছি ১০ লিটার। এখানের মধু, গুড় ও রসের মান খুব ভালো।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নোয়াখালীর উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শহীদুল হক বলেন, নোয়াখালী জেলায় প্রায় ৯৯ হেক্টর জমিতে খেজুরের চাষ হচ্ছে। আমরা ৪৯৬ টন খেজুরের রস পেয়ে থাকি। পর্যটকরা যারা যায় তারা সকালে খেজুরের রসকে খুব তৃপ্তি মনে করে খায়। শুধু তাই নয় তারা পিঠা পায়েস খাওয়ার জন্য খেজুরের রস নিয়ে আসে।