শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা
প্রতিবেদনে অসন্তুষ্ট হাই কোর্ট, তদন্তে নতুন কমিটি
খাতনা করতে গিয়ে শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনার ফের তদন্তের নির্দেশ দিয়ে নতুন কমিটি করে দিয়েছে হাই কোর্ট।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি আতাবুল্লার বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মাকসুদুল আলমকে প্রধান করে ৫ সদস্যের নতুন এই কমিটি করা হয়েছে।
কমিটির অপর চার সদস্য হলেন শশাঙ্ক কুমার মণ্ডল, আজিজুর রহমান কাজল, সাথী মর্তুজা ও আমিনুর রশীদ। এদের মধ্যে একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও তিনজন চিকিৎসক রয়েছেন।
কমিটিকে বিষয়টি অনুসন্ধান করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে রিট আবেদনকারী আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম জানান। তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে প্রতিবেদন দিয়েছে তা আদালতের মনঃপূত হয়নি। তাই আবার তদন্ত করতে নতুন কমিটি করে দিয়েছেন।”
এদিন রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ। ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
শুনানির এক পর্যায়ে জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিটির রিপোর্ট আমাদের মনঃপূত হয়নি। আমরা পাঁচ সদস্যের নতুন কমিটি করে দিচ্ছি।”
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি এ মামলার শুনানিকালে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির রিপোর্টকে ‘আইওয়াশ‘ও ‘হাস্যকর‘ বলেছিলেন বিচারক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওই প্রতিবেদনে আয়ানের মৃত্যুর নির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত না করে কয়েকটি সম্ভাবনার কথা বলা হয়। শিশুটির এমন মৃত্যুর জন্য সরাসরি কাউকে দায়ী না করে ভবিষ্যতে এ ধরনের মৃত্যু এড়াতে চার দফা সুপারিশ তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
· হাসপাতালে একাধিক অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া
· রোগী ও রোগীর আত্মীয়-স্বজনকে অ্যানেস্থেসিয়া ও অপারেশনের ঝুঁকিগুলো ভালোভাবে অবহিত করা
· হাসপাতালে আইসিইউর ব্যবস্থা রাখা
· সরকারের অনুমোদনের পর কোনো হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা
প্রতিবেদনের এক জায়গায় বলা হয়েছে, শিশু আয়ানের ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা ছিল এবং সেজন্য তাকে স্টেরয়েড দেওয়া হয়।
আয়ানের ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা জানার পরও তাকে অপারেশন কেন করা হয়েছিল, সেই প্রশ্ন সেদিন রেখেছিলেন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক।
স্বাস্থ্য বিভাগ ‘দায় এড়ানোর জন্য’ এ ধরনের রিপোর্ট দাখিল করেছে বলেও সেদিন মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
পাঁচ বছর বয়সী আয়ানকে খতনা করানোর জন্য গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার সাঁতারকুল এলাকার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল তার পরিবার। অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার পর তার আর জ্ঞান ফেরেনি।
পরে তাকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। গত ৭ জানুয়ারি সেখানেই মৃত্যু হয় শিশুটির।
আয়ানের বাবা শামীম আহামেদ পরে বাড্ডা থানায় মামলা করেন। ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট সাইদ সাব্বির আহমেদ, সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক তাসনুভা মাহজাবিন, অজ্ঞাতনামা পরিচালকসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয় সেখানে।
পরে জানা যায়, যথাযথ নিবন্ধন ছাড়াই চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল কর্তৃপক্ষ। এ কারণে ওই হাসপাতালের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ৯ জানুয়ারি হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম।
আয়ানের মৃত্যুর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয় সেখানে। পাশাপাশি হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল এবং নতুন রোগী ভর্তি না করার নির্দেশনা চেয়ে একটি সম্পূরক আবেদন করে রিট আবেদনকারী পক্ষ।
এ রিট মামলায় পরে শিশু আয়ানের বাবা পক্ষভুক্ত হন এবং পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি করেন।
স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে এ মামলায়।