অটোরিকশা বন্ধের দাবি শামীম ওসমানের
অটোরিকশাকে 'বাংলার টেসলা' বললেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী, বন্ধের দাবি শামীম ওসমানের
গণপরিবহনকে বিদ্যুচ্চালিত করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। জাতীয় সংসদে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের প্রশ্ন তোলেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। এর জবাবে বিদ্যুচ্চালিত যানবাহনকে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব উল্লেখ করে রাষ্ট্রীয়ভাবে এটিকে উৎসাহিত করার কথা বলেছেন প্রতিমন্ত্রী। এ সময় নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে বাংলার টেসলা হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সম্পূরক প্রশ্নে এ কথা বলেন নসরুল হামিদ। সংসদ সদস্য তার প্রশ্নে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের দাবি জানালেও মন্ত্রী এগুলোকে আরও উৎসাহিত করার কথা বলেন।
শামীম ওসমান তার সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলছে। রিকশার মধ্যেও ব্যাটারি লাগানো হচ্ছে। এগুলো খুবই বিপজ্জনক এবং চলাও নিষিদ্ধ। এই অটোরিকশাগুলো রিচার্জ করে তার ৯০ শতাংশ বিদ্যুৎ চুরি করে। তারা আমাদের ৭/৮শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করছে। এগুলো একযোগে সারা দেশে বন্ধের কোনও বিশেষ উদ্যোগ নেবেন কিনা? তা জানতে চাই।
জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, কত দ্রুত ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমকে ইলেকট্রিকে নিয়ে যাওয়া যায়, তার জন্য সারা বিশ্বে এখন একটা রেভুলেশন চলছে। তেলচালিত গাড়ির ইঞ্জিনের দক্ষতার মাত্রা হলো ২০ শতাংশ। অপরদিকে ইলেকট্রিক যন্ত্রের দক্ষতার মাত্রা হলো ৮০ শতাংশ। মূলত আমরা উৎসাহিত করি—বাজারে যত দ্রুত পারে ইলেকট্রিক গাড়ি আসুক।
তিনি জানান, তেলচালিত বাহনে কোনও দূরত্বে যেতে যদি ১০০ টাকা লাগে, বিদ্যুৎচালিত যানে সেই দূরত্বে যেতে লাগবে ২০ টাকা। বাংলাদেশে ৪০ লাখের ওপর যানবাহন আছে। যারা লেড ব্যাটারি ব্যবহার করে। এগুলো চার্জ করতে ৭/৮ ঘণ্টা সময় লাগে। এগুলো যদি লিথিয়াম ব্যাটারি হয়, তাহলে লাগবে মাত্র আধাঘণ্টা।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ আমরা ইলেকট্রিক গাড়ির চার্জ স্টেশন বসানোর নীতিমালা করেছি। এ নীতিমালা করে যে কেউ চাইলে চার্জ স্টেশন করতে পারবেন।
তিনি বলেন, এই ৪০ লাখ থ্রি হুইলারকে আমি বলি বাংলার টেসলা। নিজ হাতে তৈরি করছেন। আমাদের উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে কাজ করছেন। আমরা তাদের কোনও বাধা দিচ্ছি না। যান্ত্রিকভাবে এতে ত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু বিদ্যুৎ যেটা ব্যবহার করছে, তার রিটার্ন কিন্তু অনেক বেশি। এই ৪০ লাখ রিকশাচালক, যারা বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন, তারা অবশ্যই আয় করছেন। এক্ষেত্রে আমরা লেড ব্যাটারি থেকে তারা যেন লিথিয়াম ব্যাটারিতে চলে আসে এটা নিয়ে আমরা একটা প্রকল্প করছি। আমরা লেড ব্যাটারি নিয়ে তাদের লিথিয়াম ব্যাটারি দেবো।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি, বাংলাদেশে যত পাবলিক পরিবহন (বাস) আছে, সেগুলো দ্রুততার সঙ্গে বিদ্যুতে নিয়ে আসা উচিত। খরচ কম। পরিবেশবান্ধব। বাংলাদেশের পরিবহন সেক্টর ১৮ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করে। তবে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারের বিষয়টি উদ্বেগের। আমরা এটা নিয়ে চিন্তিত। কোথাও অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় কিনা, বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো সে বিষয় নজরে রাখছে। বেশিরভাগই এখন অবৈধভাবে বিদ্যুৎ না নিয়ে মিটারের মাধ্যমে নিচ্ছে।
এম আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘ক্যাপটিভ ও অফগ্রিড নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বর্তমানে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৯ হাজার ৭২৭ মেগাওয়াট। আর গ্রিডভিত্তিক উৎপাদন ক্ষমতা ২৬ হাজার ৫০৪ মেগাওয়াট। এর মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট (৪৩ শতাংশ), ফার্নেস অয়েলভিত্তিক ৬ হাজার ৪৯২ মেগাওয়াট (২৪ শতাংশ), ডিজেলভিত্তিক ৮২৬ মেগাওয়াট (৩ শতাংশ), কয়লাভিত্তিক চার হাজার ৪৯১ মেগাওয়াট (১৭ শতাংশ), হাইড্রো ২৩০ মেগাওয়াট (এক শতাংশ), অনগ্রিড সৌর বিদ্যুৎ ৪৫৯ মেগাওয়াট (দুই শতাংশ), বিদ্যুৎ আমদানি হয় দুই ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট (১০ শতাংশ)।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রাপ্যতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়ে থাকে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার বিপরীতে ১৯ এপ্রিল সর্বোচ্চ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট। শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়ায় এ বছর শীতকালে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াটে নেমে আসে। আসন্ন গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদার পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হবে।