নিত্যপণ্যের চড়া দামে অস্বস্তি
শীতের ভরা মৌসুমে চড়া থাকা সবজির দাম বসন্তে এসে সামান্য কমেছে। তবে বছরের অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এখনও দাম বেশি। অন্যদিকে, পবিত্র শবে বরাতকে সামনে রেখে বেড়েই চলেছে গরুর মাংসের দাম। বাজারে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও চড়া দামে গিয়ে আটকে গেছে।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
সকাল থেকে রাজধানীতে মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে অন্য শুক্রবারের তুলনায় বাজারে ক্রেতার উপস্থিতিও কিছুটা কম লক্ষ্য করা গেছে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতের সিম, মুলা, শালগম, ফুলকপি ও বাঁধাকপি এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার মধ্যে। যা গত সপ্তাহের চেয়ে প্রকারভেদে ১০-২০ টাকা কম। এরমধ্যে প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি আকারভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া আলুর কেজি ৩০ টাকা, বেগুন ৬০-৮০ টাকা, পেঁপের ৪০ টাকা, টমেটো গাজার ও শসার কেজি ৪০ টাকা, চিচিঙা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, বরবটি ও করলা ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, রোজার বাজারে প্রায় প্রতিবছরই দাম বাড়ে চিনির। এবার দাম কমাতে পণ্যটি আমদানিতে কিছুটা শুল্কছাড় দিয়েছে সরকার। এছাড়া ভোজ্যতেল চাল ও খেজুরের শুল্ক কর কমানো হয়েছে। তবে এসব পণ্যের দামে তার কোনো প্রভাব পড়েনি।
রাজধানীতে এখন এক কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকায়। গত বছর একই সময়ে দর ছিল ১১০-১২০ টাকা।
এছাড়া বাজারে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, আটা, পেঁয়াজ, মাছ, মাংস ও ডিমের দাম এখনও চড়া।
এদিকে, বাজারে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। ভোটের আগে প্রতি কেজির গরুর মাংস ৬০০ টাকা পর্যন্ত নামলেও ভোটের পরে তা ৭০০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। কিন্তু গত এক সপ্তাহে আরও দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়।
গরুর মাংসের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মুর্তজা বলেন, রোজা ও কোরবানিকে সামনে রেখে খামারিরা গরু বিক্রি কমিয়েছে। সে জন্য বাজারে সরবরাহ কম, দাম বাড়ছে।
এদিকে, গরুর মাংসের দাম বাড়ায় উস্মা প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। সব মিলিয়ে মানুষ স্বস্তিতে নেই।
সেগুনবাগিচা বাজারে ফরিদ মিয়া নামের একজন ক্রেতা বলেন, কোন কিছুর দাম কমছে না। একবার বাড়লে সেটা আর কমে না। আমরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। আর সেটা দেখার কেউ নেই।
এদিকে, বাজারে চড়া দামে আটকে আছে ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। প্রতি হালি বাদামি ডিম ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বড় বাজারে। আর পাড়া মহল্লার দোকানে প্রতি হালি ডিমের দাম ৫০ টাকা, ডজন ১৫০ টাকা। এছাড়া ব্রয়লার মুরগির কেজি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
শতক পেরিয়ে যাওয়া পেঁয়াজের দাম এখনও কমেনি। প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়। একই সঙ্গে চড়া দামে আদা ও রসুন দুই-ই বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা দরে।
স্বস্তি নেই মাছ বাজার
ফলে মাছ কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। মাছের উৎপাদন কমে যাওয়া, মাছের খাবারের দাম এবং পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়াকে মাছের দাম বাড়ার মূল কারণ হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মেরাদিয়া হাট, গোড়ান বাজার, খিলগাঁও রেলগেট বাজার, মালিবাগ বাজার, সেগুনবাগিচা কাঁচা বাজার ঘুরে মাছের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজকের বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৭০০- ২৩০০ টাকা, রুই মাছ ৩৫০-৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৬৫০ টাকা, কালিবাউশ ৫০০- ১০০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৭৫০ -১৫০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০ টাকা, কই মাছ ২৫০-১২০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৭০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-৮০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, বেলে মাছ ১২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৬০০- ১২০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১০০০-১২০০ টাকা শোল মাছ ৭০০-১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে মাছের দাম বাড়ায় ক্রেতাদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই কম দামের মাছও কিনতে পারছেন না।
সেগুন বাগিচা বাজারে মোফাজ্জল হোসেন বাচ্চু নামে এক ক্রেতা বলেন, আজ বাজারে এসে দেখি মাছের দাম অনেক বেশি। আগে যেখানে ৩৫০-৪০০ টাকায় এক কেজি রুই মাছ কিনতে পারতাম, এখন তা কেজিতে ৫০ টাকা বেশি দিয়ে ৪৫০-৫০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আগের মতো মাছ কিনতে পারছি না।
রোজায় বাজারে মাছের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকারের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।
শান্তিনগর বাজারে কথা হয় আরেক ক্রেতা নুসরাত জাহান নিপুর সঙ্গে। তিনি বলেন, মাছের দাম এত বেশি যে, সামান্য কিছু মাছ কিনতেই আমার পুরো বাজেট শেষ হয়ে গেছে। এভাবে চললে রোজায় চলা কষ্ট হয়ে যাবে। সরকারের উচিত মাছের বাজারের দাম কমানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।
মেরাদিয়া হাটের মাছ বিক্রেতা জহিরুল ইসলাম বলেন, মাছের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজার থেকেই আমাদের মাছ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। মাছের দাম আরও বাড়তে পারে বলে শুনেছি।