মিয়ানমারের বিজিপি, সেনাসহ ২২৯ জন পালিয়ে বাংলাদেশে

টিবিটি ডেস্ক
টিবিটি রিপোর্ট
প্রকাশিত: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৫০ এএম
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এই বিজিপি সদস্যদের ছবি প্রকাশ করেছে মিয়ানমারের সংবাদ পোর্টাল ইরাবতী

মিয়ানমারে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মধ্যে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সংখ্যা বাড়ছেই। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বলেছেন, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তিন দিনে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মোট ২২৯ জন বিজিবির হেফাজতে এসেছেন।

“তাদের মধ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপির সশস্ত্র সদস্য যেমন আছেন, সাধারণ মানুষও আছে। কারা কতজন– এ সংখ্যাটা নির্ণয়ের চেষ্টা চলছে।”

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইনে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহী আরাকান আর্মির যুদ্ধ চলছে গত কয়েকদিন ধরেই।  

শনিবার রাতে বিদ্রোহীরা বিজিপির একটি ফাঁড়ি দখল করে নিলে রোববার সকালে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ১৪ সদস্য। এরপর তিন দিনে সেই সংখ্যা বাড়তে বাড়তে সোয়া দুইশ ছাড়িয়েছে। 

তাদের নিরস্ত্র করে নিজেদের হেফাজতে নিচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। গুলিবিদ্ধ অন্তত ১৫ জনকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসাও দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে বিজিপির চার সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।  

বিজিবির হেফাজতে থাকা এই ২২৯ জনের বাইরে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর আরো কেউ বাংলাদেশে প্রবেশে করে কোথাও আশ্রয় নিয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে রাখাইনের বেশ কিছু চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের মানুষের মিয়ানমার- বাংলাদেশ সীমান্তের শূন্যরেখায় জড়ো হওয়ার তথ্য দিয়েছেন এপারে থাকা তাদের স্বজনরা। শূন্যরেখায় মানুষের জড়ো হওয়ার কিছু ভিডিও চিত্র সেখান থেকে তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে বলেও তারা দাবি করেছেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সোমবার বলেন, “বিগত কয়েকদিন ধরেই সীমানার ওপারে রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এতে করে আমরা বিভিন্ন সূত্র থেকে শুনতে পারছি যে, সেখানে একটি মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় আমরা বিভিন্ন পয়েন্টে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করছি।

“সমস্যা হচ্ছে, এসব অনুপ্রবেশ যদি ঘটে, আমরা এমনিতেই ১২ লাখের মত রোহিঙ্গা নিয়ে গত ছয়-সাত বছর ধরে হিমশিম খাচ্ছি। এখন রাখাইন থেকে যদি আরও অনুপ্রবেশ করে তাহলে সেটি আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করবে।”

তবে সীমান্ত সুরক্ষিত আছে দাবি করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রতিবেশী দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পালিয়ে আসা সদস্যদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করছে সরকার।

“এখন কোন প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, সে নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনার মধ্যে আছি। তাদেরকে কি আকাশপথে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, নাকি পোর্টের মাধ্যমে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, সেটা নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনার মধ্যে আছি। আমরা একটা পথ বের করব।”

রাখাইনে সেনা ও সশস্ত্র বিদ্রোহীদের লড়াইয়ের প্রভাব পড়ছে সীমান্তের এপারের জনগোষ্ঠীর মধ্যেও। আতঙ্কে অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে থাকছেন।  

সোমবার দুপুরে মিয়ানমার থেকে আসা গোলায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী এলাকায় নারীসহ দুজন নিহত হন।

ঘুমধুম ইউনিয়নের মধ্যমপাড়ায় মঙ্গলবার সকালেও একটি মর্টার শেল এসে পড়ে এক বাড়ির উঠানে। তবে সেখানে কেউ হতাহত হননি।

স্থানীয়রা বলছেন, এখনও তারা গোলাগুলি ও মর্টার শেলের আওয়াজ শুনতে পারছেন। সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে গুলি হচ্ছে; আবার বিদ্রোহীরাও পাল্টা গুলি চালাচ্ছে।

কেন এই যুদ্ধ

২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে।

বাহিনীগুলো হল- তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি-টিএনএলএ, আরাকান আর্মি-এএ এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি-এমএনডিএএ। তারা শান, রাখাইন, চীন ও কেয়াহ রাজ্যে লড়াই চালাচ্ছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সেনাপোস্ট দখল করে ইতোমধ্যে তারা সাফল্য দেখিয়েছে।

আরাকান আর্মি (এএ) এ জোটের অন্যতম অংশ। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর একটি সশস্ত্র বাহিনী এটি। তারা রাখাইনের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে।

রাখাইনে সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াইয়ের প্রভাব পড়ছে সীমান্তের এপারের জনগোষ্ঠীর মধ্যেও। যুদ্ধ শুরুর পর এখনই সবচেয়ে বড় অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে।