মেট্রোরেলে যুক্ত হবে আরও বগি
প্রতিদিনই যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে সময় সাশ্রয়ী এই গণপরিবহনের। অফিস শুরু ও ছুটির সময়টাতে ভিড়ের কারণে মেট্রোরেলে উঠতে পারাই অনেকের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছ। যাত্রীদের চলাচলের নানা অভিজ্ঞতা আমলে নিয়ে নতুন সুবিধা দেওয়া ও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি মেট্রোরেলে নিয়মিত যাতায়াত করা বেশ কয়েকজন যাত্রীরা জানিয়েছেন, মেট্রোরেল নিয়ে যেমন স্বস্তির অভিজ্ঞতা রয়েছে, তেমনই নতুন নতুন কিছু সমস্যাও দেখছেন যাত্রীরা।
বর্তামানে মেট্রোরেলে সময়মতো ট্রেন প্ল্যাটফর্মে না আসা সমস্যাটি বার বার দেখা দিচ্ছে বলে জানান কয়েকজন যাত্রী। তারা বলেন, মাঝে মধ্যেই দুই থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত ট্রেন দেরিতে আসতে দেখেছি। বিশেষ করে যাত্রী বাড়ার পর গত কয়েকদিনে কয়েকবারই শিডিউল লেট করেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় মেট্রোরেলে সকাল-সন্ধ্যা পিক আওয়ারে প্রত্যেক ট্রেনেই উত্তরা ও মতিঝিল থেকে যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে যায়। ফলে কিছু কিছু স্টেশনের যাত্রীদের পক্ষে ওই ট্রেনে জায়গা করে নেওয়াটা কঠিন হয়ে যায়।
কোনও কোনও ক্ষেত্রে আগের স্টেশন থেকে যাত্রী পূর্ণ হয়ে গেলে প্ল্যাটফর্ম থেকেই মাইকে ঘোষণা করে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের পরের ট্রেনে করে আসার অনুরোধ জানানো হয়। এক্ষেত্রে যাত্রীদের থেকে পিক আওয়ারে ১০ মিনিট এর পরিবর্তে ৫ মিনিট পরপর ট্রেন চলাচলের দাবি করেন।
উল্লেখ্য, সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে বেলা ১১টা ৩০ মিনিট এবং বিকাল ৪টা ১ মিনিট থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেট্রোরেলের ‘পিক আওয়ার’। এসময় ১০ মিনিট পরপর মেট্রোরেল চলাচল করার কথা। অফিস ঘণ্টায় ১০ মিনিটের পরিবর্তে ৫ মিনিট পর পর ট্রেন চলাচলের দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা। সম্প্রতি সকালে পিক আওয়ারে কয়েকটি ট্রেন ১০ মিনিটের পরিবর্তে ৫ মিনিট পরপর প্ল্যাটফর্মে এসে থেমেছে বলে যাত্রীরাও জানিয়েছেন।
অফ পিক আওয়ারে (বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত) ১২ মিনিট পর পর মেট্রো ট্রেন স্টেশনে থামছে।
এছাড়া মেট্রোরেল চলাচল কোনও কারণে বিঘ্ন ঘটলে প্ল্যাটফর্মের ভেতরে অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর জরিমানা হিসেবে অতিরিক্ত টাকা কাটার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে এখনও কোনও সমাধান রাখেনি মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে লেট হওয়ায় অনেক যাত্রীদের নিজেস্ব পাস থেকেও জরিমানার টাকা কেটে রাখার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।
ট্রেন বিলম্বের বিষয়ে মিরপুর ১০ নম্বর এর বাসিন্দা সাইফুল্লাহ শহীদ বলেন, মতিঝিলে আমার অফিস। আমার অফিসের কিছু কলিগও আগারগাঁও ফার্মগেট থেকে ওঠে। মেট্রোরেলের সার্ভিস নিয়ে কোনও অভিযোগ নাই। ভিড় বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে মাঝে দুইদিন শিডিউল বিপর্যয় ছাড়া আর কোনও সমস্যা দেখি নাই। এমআরটি র্যাপিড পাস করা আছে, সহজেই যাতায়াত করা যায়।
অফিসের সময় ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো উচিত জানিয়ে মিরপুর কাজিপাড়ার আরেক যাত্রী নয়েন বলেন, সকালে উত্তরা থেকে লোক ভরে আসে, আবার সন্ধ্যার সময় মতিঝিল থেকে। এই অফিস সময়ে মাঝের স্টেশনগুলোতে যেই যাত্রীরা থাকেন তাদের জন্য কষ্ট হয় ট্রেনে উঠতে। সকালে কাজিপাড়া থেকে উঠতে গেলে জায়গা পাওয়া কঠিন। মিরপুর ১০-১১ থেকেই ট্রেন লোকে ভর্তি থাকে।
মেট্রোরেলের বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কোম্পানি সচিব (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ আবদুর রউফ। মেট্রো ট্রেনের চলাচলের মধ্যবর্তী সময় কমানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আমরা চিন্তা করছি। এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা দেখছি বিষয়টা। আমাদের টিম কাজ করছে। সার্ভে করে আমরা দেখবো মেট্রো ট্রেন চলাচলের মধ্যবর্তী সময়টা কতটা কমিয়ে আনা যায়।
গত তিন দিনে প্রায় ২০ হাজার এমআরটি পাস কিনেছেন যাত্রীরা—এই তথ্য জানিয়ে মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, এখন যে ভিড় হচ্ছে তার কারণ এখন নতুন অনেকে মেট্রোরেল ব্যবহার শুরু করছেন। তারা একক টিকেট কেটে যাতায়াত করছেন। তাদের অনেকেই এরইমধ্যে এমআরটি পাস কিনে ফেলবেন। গত তিন দিনে আমাদের এমআরটি পাস কিনেছেন প্রায় ২০ হাজার লোক। তারা কিন্তু আর লাইনে দাঁড়াবেন না।
সমাস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সংযোজিত হবে জানিয়ে মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, আমাদের বগি বাড়ানোর চিন্তাও আছে। যে সিস্টেমে আছে সেখানে প্রত্যেক কোচে আরও দুটি বগি যুক্ত করতে পারবো। এছাড়া নতুন কোচ প্রয়োজন হলে ভাবা হবে।
মেট্রোরেলের শিডিউল ফেলের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, প্রত্যেকটা ট্রেন তার যাত্রীর ওজন ক্যালকুলেট করে ওই অনুযায়ী প্রত্যেক স্টেশনে অটো ব্রেক করে। এই সিস্টেম সিগন্যালে কোনও মেসেজে টেকনিক্যাল ইস্যু যদি হয় তাহলে সেটা স্টেশনের ট্রেনে ঢোকার জন্য যে দরজাগুলো আছে তার আগে অথবা পরে থেমে যায়। তখন সেটাকে ম্যানুয়ালি সঠিক জায়গায় সেট করতে হয়। তখন দুই তিন মিনিট লাগে। এটা এড্রেস করানোর জন্য আমরা আমাদের কনট্রাকটরসহ আরও যারা আছে তাদের সঙ্গে মিটিং করেছি। শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হবে।
এছাড়াও অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে ট্রেনের দরজা খোলা বন্ধ নিয়ে সমস্যা হয়। তখন স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়তে লেট হয়।
এসব ছাড়াও আরও যেসব জায়গায় কাজ করতে হবে তা ডিএমটিসিএল কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন একটা সিস্টেম চালু হয়েছে। জনগণও অভ্যস্ত হয় নাই। আমাদেরও প্রতিনিয়তই নতুন বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আমরা সমাধান খুঁজে বের করবো।
২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে গত ৪ নভেম্বর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করেন তিনি। গত ৩১ ডিসেম্বর সর্বশেষ মেট্রোরেলের শাহবাগ ও কারওয়ানবাজার স্টেশন চালু হয়। এর মধ্য দিয়ে এমআরটি-৬ লাইনের উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬ স্টেশনে চালু হলো মেট্রোরেল।
মেট্রোরেলের ১৬ টি স্টেশন হলো— উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় এবং মতিঝিল।
গত ২০ জানুয়ারি থেকে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল অংশে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলাচল করছে মেট্রোরেল।