হাইকোর্টে বাংলায় রায়ের সংখ্যা বাড়ছে

টিবিটি ডেস্ক
টিবিটি রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০২:৩৯ এএম

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষায় রায় ও আদেশের সংখ্যা বাড়ছে। সুপ্রিম কোর্টে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আইনজীবীদের এখন বাংলায় শুনানি করতে দেখা যায়। আদালতের জিজ্ঞাসায়ও দেখা যায় বাংলার ব্যবহার। 

যদিও এ পর্যন্ত উচ্চ আদালতে বাংলায় কতটি আদেশ ও রায় হয়েছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা যায়নি। তবে এটা সত্য যে, গত কয়েক বছরের তুলনায় বর্তমানে বাংলায় দেওয়া রায়ের সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ইংরেজিতে প্রকাশিত সব রায় ও আদেশ বাংলায় দেখতে গত বছর থেকে নতুন প্রযুক্তি সেবা যুক্ত করা হয়েছে। 

এখান থেকে গুগল প্রযুক্তির মাধ্যমে বিচার প্রার্থী ও আইনজীবী বা যেকোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইটে ইংরেজিতে প্রকাশিত রায়-আদেশ বাংলায় অনুবাদ করে দেখতে পারেন।  

সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ মিলে বর্তমানে শতাধিক বিচারপতি রয়েছেন। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানও বাংলায় রায় লিখেছেন। আপিল বিভাগের বিচারপতির মধ্যে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম অসংখ্য রায় বাংলা ভাষায় দিয়েছেন। এছাড়া আপিল বিভাগের বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) হত্যা মামলার ১৬ হাজার ৫৫২ পৃষ্ঠার রায় বাংলায় লিখেছেন। 

আপিল বিভাগের আরেক বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম বাংলায় অসংখ্য রায় ও আদেশ প্রদান করেছেন। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির মধ্যে বিচারপতি শেখ জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল নিয়মিত বাংলা ভাষায় রায় ও আদেশ দিয়ে আসছেন।

১০ বছর আগেও বাংলায় রায়–আদেশ ছিল হাতেগোনা। এখন আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে ৭০ শতাংশ মামলায় আইনজীবীদের বাংলায় যুক্তি উপস্থাপন করতে দেখা যায়। এছাড়া এখন অনেক বিচারপতি বাংলায় রায় দিয়ে আসছেন। সংগত কারণে সব মামলায় বাংলা ভাষায় রায় দেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ অনেক মামলায় বিদেশিরা পক্ষ থাকেন।

ভাষার মাসের সম্মানে বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষায় রায় ও আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার,বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম, বিচারপতি গোবিন্দ্র চন্দ্র ঠাকুর, বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস, বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান, বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী, বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান, বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান, বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খান, বিচারপতি মো. বশির উল্লাহ।

উচ্চ আদালতে বাংলায় রায় দেওয়ার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান  বলেন, রায় কোন ভাষায় দেওয়া হবে সেটা বিচারপতিদের নিজস্ব এখতিয়ার। তবে সব রায় বাংলা ভাষায় দেখার জন্য সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রযুক্তি যুক্ত করা হয়েছে। কোনো মামলায় রায় দেওয়ার সময় বিভিন্ন দেশের আদালতের রায়, ডিসিশন রেফারেন্স হিসেবে উদ্ধৃত করা হয়। যা সবই ইংরেজি ভাষায়। এছাড়া বাংলাদেশের  উচ্চ আদালতের রায় অনেক দেশের আদালতে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। এ সব কারণে ইংরেজি ভাষায় বিচারপতিরা রায় দিয়ে থাকেন। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বিচারপতি বাংলা ভাষায় রায় দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন।’

অবশ্য সাধারণ মানুষ ও বিচার প্রার্থীরা যাতে রায় বুঝতে পারেন, সে জন্য ইংরেজিতে দেওয়া রায় বাংলায় অনুবাদ করতে ২০২১ সালে সুপ্রিম কোর্টে একটি সফটওয়্যার যুক্ত হয়। ‘আমার ভাষা’ নামের এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে আদালতের রায় বাংলায় অনুবাদ করা যায়।

জানা গেছে, সফটওয়্যারের মাধ্যমে ইংরেজি রায়ের ৭০ শতাংশ সঠিক অনুবাদ হয়। বাকিটা নিজেদের ঠিক করে নিতে হয়। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বেশ কিছু রায় অনুবাদ করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার আরও বাড়ানো উচিত। যদিও উচ্চ আদালতের বেঞ্চগুলোতে কোনো মামলার শুনানির সময় আইনজীবীরা প্রায় ৯০ শতাংশ সাবমিশন বাংলা ভাষাতে রাখেন। আইনজীবী-বিচারকদের মধ্যে কথোপকথন বাংলা ভাষাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয়। বাংলা ভাষায় বিচারপতিরা আরও বেশি রায় দেবেন বলে আশা করছি।

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট আগে শুধু ইংরেজি ভার্সনে থাকলেও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভার্সনও উন্মুক্ত করা হয়েছে। ফলে ওয়েবসাইটে কোনো কিছু খুঁজতেও সাধারণ মানুষের আর কোনো সমস্যা হবে না। ইংরেজি রায় ও আদেশ বাংলায় অনুবাদে প্রায় চার বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টের অনুবাদ সেল কাজ করছে। অনুবাদ সেল ব্যবহার করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংবলিত ‘আমার ভাষা’ সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে।

আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, ওয়েবসাইটে ইংরেজিতে প্রকাশিত সব রায়-আদেশ গুগলের প্রযুক্তির সহায়তায় যেকোনো ব্যক্তি বাংলায় অনুবাদ করে দেখতে পারবেন। এতে বিচার প্রার্থী তার মামলার ফলাফল সম্পর্কে অন্তত জানতে পারবে। প্রযুক্তির এই সংযোজন দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে নতুন এক মাত্রা যোগ করেছে। তবে শব্দ ও ভাষাগত কিছু দুর্বলতা আছে।

ওয়েবসাইটে ইংরেজিতে প্রকাশিত রায় গুগলের মাধ্যমে বাংলায় অনুবাদ করলে ওপরে ‘দায়বর্জন বিবৃতি’ দেখা যায়। এর ভাষ্য, জনসাধারণের বিচার প্রক্রিয়ায় সহজ অভিগম্যতা নিশ্চিতকরণের অভিপ্রায়ে বাংলায় অনূদিত রায়-আদেশ দেখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অনূদিত রায় বা আদেশের অনুলিপি সই মুহুরি বা জাবেদা নকলের বিকল্প হিসেবে অথবা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না।