ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে চলে সংসার
বাঁশ দিয়ে তৈরি মালবাহনের গাড়ি। যার মাঝখানে থাকে দুটি রাবারের তৈরি চাক্কা। আর এ গাড়ি টানতে সামনে থাকে একটি ঘোড়া।
মধুপর বনাঞ্চল ঘেঁষে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার সন্তোষপুর বনভূমি এলাকায় দেখা যাবে এই মালবাহী ঘোড়ার গাড়ি।
বনভূমির দুর্গম উঁচু-নিচু পাহাড়ি কর্দমাক্ত পথ মাড়িয়ে চলছে পরিবহনের এই বাহন।
এসব ঘোড়ার গাড়িতে বহন করা যায় ২০ থেকে ২৫ মণ ওজনের মালামাল।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সন্তোষপুর বনে এক সময় শাল, গজারিসহ অনেক বনজ গাছ ছিল। কিন্তু বনদস্যুদের কারণে এখন আর আগের মত ঘন বন নেই।
বনের পরিবেশ রক্ষায় জনসাধারণের মাঝে বন্টন করে নেওয়া হয়েছে সামাজিক বনায়নের উদ্যোগ। ফলজ গাছ ও ফসল চাষাবাদও করা হয়।
পাহাড়ি বনভূমিতে উৎপাদিত আনারস, কলার ছড়া ইত্যাদি ফল এবং কাঠ পরিবহনে এই এলাকায় একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে ঘোড়ার গাড়ি ।
মালামাল বেশি হলে ঘোড়ার কয়েকজন গাড়িয়াল বা চালক এক সঙ্গে ভাড়া নির্ধারণ করেন। এরপর ঘোড়ারগাড়ির সারি চলে মালামাল নিয়ে।
কেউ কেউ বলছেন, ময়মনসিংহ জেলার নাওগাঁও, রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক ঘোড়াগাড়ির চালক রয়েছেন।
ঘোড়ার চাকা চললে তাদের অনেকের সংসার চলে। এই আধুনিক যুগেও আদি পেশায় কাজ করে তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।
সন্তোষপুর বনাঞ্চলের উৎপাদিত মালামাল ঘোড়ারগাড়ি চালিয়ে পরিবহন করেন গাড়িয়াল বারেক।
তিনি বলেন, ” আমার উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম এই ঘোড়ার গাড়ি।”
” অনেক সময় মধুপুর, ঘাটাইল ও মাঝে মধ্যে ময়মনসিংহ শহরেও মালামাল পৌঁছে দিয়ে আসি।”
বাপ-দাদার পেশা ঘোড়ার গাড়ি চালানো বেছে নিয়েছেন গাড়িয়াল আবুল কালাম।
তিনি বলেন, ”আধুনিকতার যুগেও সব মিলিয়ে আমার উপার্জন ভালোই হচ্ছে।
”দৈনিক দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা ইনকাম করা যায়। এতেই আমার সংসার চলে।”
ঘোড়ার গাড়ি চালক রউফ মিঞা বলেন, ”পাহাড়ি এলাকায় স্বল্প টাকায় বিশ্বস্ততার সঙ্গে ঘোড়া চালকেরা বেপারি ও কৃষকদের মালামাল পরিবহন করে।”
এ যুগেও এ অঞ্চলে ঘোড়ার কদর কমেনি বলে জানালেন এই গাড়িয়াল।