গাজীপুরে গ্যাসের আগুনে দগ্ধ বেশিরভাগের অবস্থা আশঙ্কাজনক

টিবিটি ডেস্ক
টিবিটি রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০২৪ ০২:০৬ এএম

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গ্যাসের আগুনে দগ্ধ হয়ে যে ৩২ জন ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন, তাদের অর্ধেকেরই পোড়ার মাত্রা ৫০ শতাংশের বেশি।

বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রোগীদের বেশিরভাগের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।

বৃহস্পতিবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “শিশুদের শরীরের ১০ শতাংশের বেশি এবং বয়স্কদের ১৫ শতাংশের বেশি পুড়ে গেলেই তাদের জীবনের ঝুঁকি থাকে। যাদের শরীর এরচেয়ে বেশি পুড়েছে তাদের সবারই জীবন নিয়ে শঙ্কা আছে।” 

বুধবার সন্ধ্যায় ইফতারের আগে আগে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ওই ঘটনা ঘটে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক তেলিরচালা এলাকায়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা জানান, যে বাসায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে গ্যাস বের হতে থাকা গরম সিলিন্ডার ভেজা চট দিয়ে মুড়িয়ে বাইরে রেখে যান পরিবারের কেউ একজন। স্থানীয়দের অনেকে কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে এসেছিলেন কী হচ্ছে সেটা দেখতে।

ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসছিল। পোশাক কারখানা থেকে বাসায় ফিরছিলেন অনেক পোশাক কর্মী। তাদের পাশাপাশি ঘটনা দেখতে ভিড় জমিয়েছিল আশপাশের শিশুরাও। সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বেরিয়ে যে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে, তা বুঝতে পারেনি কেউ।

সে সময় পাশের আরেকটি বাসায় চুলা ধরাতে গেলে পুরো রাস্তায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাতেই দগ্ধ হয় সবাই।

রাতেই তাদের নিয়ে আসা হয় ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে। সে সময় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩৪ জন বলা হলেও বৃহস্পতিবার সকালে তা সংশোধন করে জানানো হয়, রোগীর সংখ্যা ৩২ জন।

ইনস্টিটিউটের একজন চিকিৎসক জানান, রাতে যে তালিকা করা হয়েছিল, সেখানে ভুলক্রমে একজনের নাম দুইবার এসেছিল। আর চট্টগ্রাম থেকে আরেক রোগীর নাম গাজীপুরের রোগীদের তালিকায় চলে এসেছিল।  

গাজীপুরে গ্যাসের আগুনে দগ্ধ বেশিরভাগের অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক’
বার্ন ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক এস এম আইয়ুব হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ভর্তি রোগীদের মধ্যে ১৬ জনের শরীরে পোড়ার মাত্রা ৫০ শতাংশ বা তার বেশি। তাদের পাঁচজনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। 

পোড়ার মাত্রা ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ হলে সেই রোগীদের ‘ব্ল্যাক’ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়। গাজীপুরের রোগীদের মধ্যে ১৬ জন আছেন ওই ক্যাটাগরিতে।

তাদের মধ্যে মনসুর নামে ৩০ বছর বয়সী একজনের শরীরে পোড়ার মাত্রা ১০০ শতাংশ। ৮০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি পুড়েছে এমন রোগীর সংখ্যা ১৩ জন।

পোড়ার মাত্রা ২০ শতাংশ থেকে ৪৯ শতাংশ হলে সেই রোগীদের ‘রেড’, ৫ থেকে ১৯ শতাংশ পুড়লে ‘ইয়েলো’ এবং ৫ শতাংশের কম হলে ‘গ্রিন’ ক্যাটাগরি রেখে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়।   

গাজীপুরের দগ্ধদের মধ্যে ৮ জন ‘রেড’, ৫ জন ‘ইয়েলো’ এবং ৩ জন ‘গ্রিন’ ক্যাটাগরিতে আছেন।

ভর্তি রোগী যারা:
আজিজুল (২৪), পোড়ার মাত্রা ৩%

তারেক রহমান (১৮), পোড়ার মাত্রা ২০%

মশিউর আলী (২২), পোড়ার মাত্রা ৫২%

তায়েবা (৩), পোড়ার মাত্রা ৮০%

মোসাম্মৎ নার্গিস (২৫), পোড়ার মাত্রা ৯০%

রমিসা (৩৬), পোড়ার মাত্রা ৩%

সুমন (২৫), পোড়ার মাত্রা ২৫%

কবীর (৩০), পোড়ার মাত্রা ৪৫%

তাওহিদ (৭), পোড়ার মাত্রা ৮০%

রাব্বী (১৩), পোড়ার মাত্রা ৯০%

মো. সোলায়মান (৬), পোড়ার মাত্রা ৮০%

সাদিয়া খাতুন (১৮), পোড়ার মাত্রা ৫%

শিল্পী (৪৫), পোড়ার মাত্রা ২৫%

মহিদুল (২৫), পোড়ার মাত্রা ৯৫%

শারমিন (১১), পোড়ার মাত্রা ১০%

মো. নাঈম (১৩), পোড়ার মাত্রা ৪০%

মুন্নাফ (১৮), পোড়ার মাত্রা ৪০%

মো. আরিফ (৪০), পোড়ার মাত্রা ৭০%

মনসুর আলী (৩০), পোড়ার মাত্রা ১০০%

রত্না বেগম (৪০), পোড়ার মাত্রা ১%

সুফিয়া (৯), পোড়ার মাত্রা ১০%

জহুরুল ইসলাম (৩২), পোড়ার মাত্রা ৫৮%

নাদেন (২২), পোড়ার মাত্রা ৮৫%

ইয়াসিন আরাফাত (২১), পোড়ার মাত্রা ৮৫%

রহিমা (৩), পোড়ার মাত্রা ১০%

লালন (২৪), পোড়ার মাত্রা ৪০%

কমলা খাতুন (৮০), পোড়ার মাত্রা ৮০%

সুলাইমান মোল্লা (৪৫), পোড়ার মাত্রা ৯৫%

নিলয় (৩), পোড়ার মাত্রা ৮%

নীরব (৭), পোড়ার মাত্রা ৩২%

কুদ্দুস (৪৫), পোড়ার মাত্রা ৮০%

মোতালেব (৪৮), পোড়ার মাত্রা ৯৫%