যা বললেন ডলি জহুর, শুভ্র দেব ও শিমুল মুস্তাফা
একুশে পদক পাচ্ছেন ২১ বিশিষ্ট ব্যক্তি
কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর ও শুভ্রদেব, অভিনেত্রী ডলি জহুর, কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিক চলতি বছর (২০২৪) একুশে পদক পাচ্ছেন।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একুশে পদকের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করা হয়।
এবার ভাষা আন্দোলনে দুজন, শিল্পকলায় ১২ জন, শিক্ষায় একজন, সমাজসেবায় দুজন এবং ভাষা ও সাহিত্যে ৪ জন একুশে পদক পাচ্ছেন।
ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে মরণোত্তর একুশে পদক পেয়েছেন মৌ. আশরাফুদ্দীন আহমদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া। শিল্পকলার বিভিন্ন শ্রেণিতে ১১ জন হলেন- সংগীতে জালাল উদ্দীন খাঁ (মরণোত্তর), বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ, বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর), এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর) ও শুভ্র দেব। অভিনয়ে ডলি জহর ও এমএ আলমগীর, আবৃতিতে খান মো. মুস্তাফা ওয়ালীদ (শিমুল মুস্তাফা) ও রূপা চক্রবর্তী, নৃত্যকলায় শিবলী মোহাম্মদ এবং চিত্রকলায় শাহজাহান আহমেদ বিকাশ।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আরকাইভিংয়ে কাওসার চৌধুরী, সমাজসেবায় মো. জিয়াউল হক ও আলহাজ রফিক আহামদ এবং শিক্ষায় প্রফেসর ড. জিনবোধি ভিক্ষু।
এছাড়া ভাষা ও সাহিত্যে পদকপ্রাপ্ত চারজন হলেন- মুহাম্মদ সামাদ, লুৎফর রহমান রিটন, মিনার মনসুর ও রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (মরণোত্তর)।
নীতিমালা অনুযায়ী, নির্বাচিত প্রত্যেককে এককালীন নগদ ৪ লাখ টাকাসহ ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়। রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘একুশে পদক’। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে চালু করা একুশে পদক সরকার প্রতিবছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, ভাষাসৈনিক, ভাষাবিদ, গবেষক, সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ, দারিদ্র্য বিমোচনে অবদানকারী, সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পর্যায়ে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৬ সাল থেকে একুশে পদক দেওয়া হচ্ছে।
একুশে পদক ২০২৪: যা বললেন ডলি জহুর, শুভ্র দেব ও শিমুল মুস্তাফা
এবার লক্ষণীয় বিষয় হলো, ২১ জনের এই তালিকার মধ্যে শুধু শিল্পকলা থেকেই এই রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পাচ্ছেন ১২ জন শিল্পী। এর মধ্যে রয়েছেন সংগীতের জন্য জালাল উদ্দীন খাঁ (মরণোত্তর), বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ, বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর), এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর) ও শুভ্র দেব। নৃত্যকলায় শিবলী মহম্মদ। অভিনয়ে ডলি জহুর ও এমএ আলমগীর। আবৃত্তিতে খান মো. মুস্তফা ওয়ালীদ (শিমুল মুস্তাফা) ও রূপা চক্রবর্তী। চিত্রকলায় শাহজাহান আহমেদ বিকাশ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইভিংয়ের জন্য কাওসার চৌধুরী।
এর মধ্যে এমন সুখবরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অভিনেত্রী ডলি জহুর মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বলেন, ‘‘আমি নিয়মিত চেকআপের জন্য এখন হাসপাতালে এসেছি। খবরটা পেয়ে ভালো লাগছে। কয়েক দিন আগে অনেকেই বলাবলি করছিল, আমার নাকি একুশে পদক পাওয়া উচিত।
আমি তখন তাদের বলেছি, ‘এসব পুরস্কারের প্রতি আমার কোনও লোভ-লালসা নেই’। তবে আজ সত্যি সত্যি পুরস্কারের কথা শুনে অবাক হয়েছি।’’
থামলেন না আবেগাপ্লুত কিংবদন্তি। বললেন, ‘তবে আমি সবসময়ই বলতাম এবং আজও বলছি, আমার চেয়ে দেশে আরও অনেক গুণী মানুষ আছেন। তাদেরও এই সম্মাননা পাওয়া উচিত।’
এদিকে সংগীতের জন্য মনোনীত শুভ্র দেবের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি তুলে ধরেন নিজের বর্ণাঢ্য সংগীত ক্যারিয়ারের কথা। বিশেষ করে প্রেমের গানের বাইরেও স্পোর্টস এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে তার গানের রেশ ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি। তিনি মনে করেন, তারই স্বীকৃতি মিলেছে এই একুশে পদক প্রাপ্তির মাধ্যমে।
শুভ্র দেব বলেন, ‘অ্যাকচুয়ালি আমি তো শুধু গানের অ্যালবামই করিনি, প্রচুর কাজ করেছি। ক্রিকেটের থিম সং থেকে শুরু করে দেশের সর্বাধিক স্পোর্টস রিলেটেড থিম সং আমার করা। এর বাইরে সামাজিক অনেক ইভেন্ট বা প্রজেক্টেরও গান করেছি।
আজ সন্ধ্যায় একুশে পদক প্রাপ্তির চূড়ান্ত খবর পেয়ে ভালো লেগেছে। এটা তো আসলে বড় একটা অর্জন। আমি আরও আনন্দিত, আমার সঙ্গে আমাদেরই সিলেটের বিদিত লাল সেন মরণোত্তর হলেও পুরস্কারটি পেয়েছেন। এটা ওনার প্রাপ্য ছিল।’
এদিকে আবৃত্তিতে এই সম্মাননা পাচ্ছেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় বাচিকশিল্পী শিমুল মুস্তাফা। প্রথমত তিনি খুব করেই বললেন, পদক হাতে পাওয়ার আগে তিনি এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেবেন না। কারণ, মন্ত্রণালয় থেকে তাকে বারণ করা আছে। তবে শুধু এটুকু বললেন, ‘দেখুন এটা তো আমার জন্য সবচেয়ে আনন্দের ও বড় প্রাপ্তি। সেটা যে কারোর জন্যই সম্ভবত। আমিও তার বাইরে নই। খবরটি পেয়ে খুশি লাগছে। এই প্রাপ্তিতে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।’
পদকপ্রাপ্তদের ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের তৈরি ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি করে পদক, দুই লাখ টাকা, একটি সম্মাননাপত্র ও একটি রেপ্লিকা দেওয়া হবে।