ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তোলার প্রবণতা বেড়েছে

টিবিটি ডেস্ক
টিবিটি রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০১:৩১ এএম

ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলে ঘরে রাখার প্রবণতা আবার বেড়েছে। গত ডিসেম্বরে গ্রাহকেরা ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। এসব টাকা ওই মাসে আর ব্যাংকে ফেরত আসেনি। ফলে এই টাকা রয়ে গেছে মানুষের হাতে। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকব্যবস্থার বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসভিত্তিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে ডিসেম্বরে নগদ টাকার লেনদেন বেড়ে যায়। এ ছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক মানুষ সঞ্চয় ভাঙাচ্ছেন। আবার বছরের শেষে অনেকে দেশ–বিদেশ ঘুরতে যান তাতেও নগদ টাকা বেশি খরচ হয়। আবার বিয়েশাদিসহ নানা অনুষ্ঠানও থাকে। সব মিলিয়ে তাই ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তোলা বেড়ে গেছে। এসব অর্থ কিছুদিন পর আবার বিভিন্ন হাত ঘুরে ব্যাংকে ফিরে আসবে।

এদিকে গত জুলাইয়ে ব্যাংকঋণের সুদহারের নির্দিষ্ট সীমা তুলে নেওয়া হয়। এরপর থেকে ব্যাংকগুলো আমানতেরও সুদহার বাড়াতে শুরু করে। কিন্তু সুদ বাড়িয়েও কাঙ্ক্ষিত আমানত পাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। কোনো কোনো ব্যাংক যে পরিমাণ নতুন আমানত পাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি আমানত তুলে ফেলছেন গ্রাহকেরা। 

আবার ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা দিয়ে ডলার কেনার কারণেও ব্যাংক খাতে টাকার টান পড়েছে। পাশাপাশি সরকারি ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে ব্যাংকগুলো। ফলে তারল্যসংকটে পড়েছে বেশির ভাগ ব্যাংক। এ সংকটে সবচেয়ে পড়েছে প্রচলিত ধারার দুটি ও শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে ছাপানো টাকার পরিমাণ (রিজার্ভ মানি) ছিল ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। নভেম্বর মাসে যা ছিল ৩ লাখ ৪০ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসেই ছাপানো টাকার পরিমাণ বেড়েছে ৩১ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। ছাপানো টাকার বড় অংশ থাকে মানুষের হাতে ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভল্টে। বাকি অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা থাকে।

গত ডিসেম্বরে মানুষের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকের ভল্টে থাকা টাকার পরিমাণ কমে গেছে। ডিসেম্বরে ২৪ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা ছিল বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভল্টে। গত নভেম্বরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ভল্টে ছিল ২৬ হাজার ৬৯ কোটি টাকা। 

ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ছিল ৯২ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা, নভেম্বরে যার পরিমাণ ছিল ৬৫ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে ছিল ২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা, নভেম্বরে যা ছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বরে ব্যাংক খাতে আমানত ছিল ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৫৪ হাজার ২৮৭ কোটি টাকায়। অন্যদিকে নভেম্বরে ব্যাংকঋণ ছিল ১৫ লাখ ৬৪ হাজার ৬২১ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে বেড়ে হয় ১৫ লাখ ৯২ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা। এর ফলে ব্যাংকগুলোতে তারল্যসংকট তৈরি হয়।

মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়ার পর যা আর ব্যাংকে জমা হয় না, তা-ই ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকা হিসেবে পরিচিত। এই টাকা মানুষ হয় দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে, নয়তো বেশি লাভের আশায় ব্যাংকের বাইরে বিভিন্ন সমিতি, জমি, ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ করেন। আবার কেউ কেউ টাকা তুলে ঘরেও রেখে দেন।