ব্যাংক ঋণের সুদহার সাড়ে ১৩% ছাড়িয়েছে
দেশে ব্যাংক ঋণের সুদহার আরো বেড়ে সাড়ে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এপ্রিলে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। মার্চে এ হার ছিল ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়েছে দশমিক ৪৪ শতাংশীয় পয়েন্ট। আর গত নয় মাসের হিসাব ধরলে এ সময়ে বেড়েছে ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গত বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদ ৯ শতাংশ নির্ধারিত ছিল।
ব্যাংক ঋণের সুদহার নির্ধারণে প্রতি মাসের শুরুতে ‘সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল’ বা ‘স্মার্ট’ রেট ঘোষণা করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল মার্চের স্মার্ট রেট ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ ঘোষণা করা হয়। এর সঙ্গে ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত ৩ শতাংশ মার্জিন যুক্ত করতে পারবে। সে হিসাবে এপ্রিলে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
তবে এসএমই ও রিটেইল ঋণের জন্য গ্রাহকদের এর চেয়েও বেশি সুদ গুনতে হবে। এপ্রিলে এ দুই খাতের ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। কৃষি ও পল্লী ঋণের ক্ষেত্রে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ হবে। আর ক্রেডিট কার্ডের ঋণের সর্বোচ্চ সুদ ২০ শতাংশ থাকবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জানানো হয়।
এদিকে এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে স্মার্টের সঙ্গে যুক্ত মার্জিনের হার দশমিক ৫০ শতাংশ কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে মার্জিনের হার ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরপর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সে হার ৩ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। আর গতকাল আরেক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জানানো হয়, মার্জিন হবে ৩ শতাংশ।
প্রি-শিপমেন্ট রফতানি ঋণ এবং কৃষি ও পল্লী ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে মার্জিন নির্ধারণ হয় ২ শতাংশ। মার্জিনের হার দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট কমানো না হলে ব্যাংক ঋণের সুদহার আরো বেড়ে যেত। এক্ষেত্রে এপ্রিলে ঋণের সুদহার দাঁড়াত ১৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে।
মার্জিন কমানোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জারীকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঋণের সুদহার মুদ্রানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা এবং অর্থনৈতিক গতিশীলতা বজায় রাখার জন্য মার্জিন দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে ব্যাংক ঋণের সুদহার বাজারভিত্তিক করা হয়, যা নির্ধারিত হচ্ছে গত বছরের জুলাই থেকে। ডলার সংকট কাটাতে দাতা সংস্থাটির কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা নিচ্ছে সরকার। এ ঋণ প্রাপ্তির অন্যতম শর্তই হলো ঋণের সুদহারকে বাজারভিত্তিক করা।
মূল্যস্ফীতির হার কমানোর কথা বলে গত বছরের জুলাইয়ে ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও সুদহার বৃদ্ধির প্রভাব এখনো মূল্যস্ফীতিতে দৃশ্যমান হয়নি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, টানা ২০ মাস ধরে দেশের মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতেও এ হার ছিল ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা যদিও বলছেন, দেশের প্রকৃত মূল্যস্ফীতির হার বিবিএসের তথ্যের চেয়ে অনেক বেশি।
ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশের ব্যাংক খাতে তারল্যের সংকটও তীব্র হয়ে উঠেছে। গতকাল দেশের আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে (কলমানি) একদিন মেয়াদি ধারের সর্বোচ্চ সুদহার ছিল সাড়ে ৯ শতাংশ। সুদহার এত বেশি হওয়া সত্ত্বেও কলমানি বাজারে প্রত্যাশা অনুযায়ী অর্থ মিলছে না। এজন্য ব্যাংকগুলোকে দৈনন্দিন লেনদেন সম্পন্ন করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ ধার বাড়াতে হচ্ছে।
যদিও বাজারে অর্থের সরবরাহ কমানোর কথা বলে নীতি সুদহার (রেপো) কয়েক দফায় বাড়িয়ে ৮ শতাংশে উন্নীত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো এখন প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করছে। গত ২৮ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার দেয়া অর্থের পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা।
তারল্য সংকট তীব্র হওয়ায় সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহারও বাড়ছে। গত সপ্তাহে ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার উঠেছে ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশে। এর চেয়ে বেশি মেয়াদি সুদের হার আরো বেশি। উচ্চ এ সুদেই ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিচ্ছে সরকার।