১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা

বসন্ত হাওয়ায় আগুন লেগেছে ফুলের বাজারে

টিবিটি ডেস্ক
টিবিটি রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৪৫ পিএম

বইছে ফাগুনের হাওয়া। বসন্ত ও ভালোবাসার যুগপৎ উদযাপন ঘিরে ‘আগুন’ লেগেছে গোলাপ, রজনীগন্ধা ও চন্দ্রমল্লিকায়।

এবার স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি দামে ফুল বিক্রি করছেন ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছার গদখালী ইউনিয়নের চাষিরা। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পয়লা ফাল্গুন, বসন্তের প্রথম দিন একইদিন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। 

এরপর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এসব দিবস সামনে রেখে ফুল বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এই তিন দিবসে ৬০-৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করছেন তারা। সেইসঙ্গে চলতি মৌসুমে অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা তাদের।

২০২০ সালে বাংলা একাডেমির সংশোধিত বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ১৩ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ফাল্গুনের শুরু। ওই দিনে উদযাপিত হয় বসন্ত উৎসব। একই দিন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ইতিহাসে যা সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে নামে পরিচিত। দিবসগুলো ঘিরে এরই মধ্যে গোলাপ, জারবেরা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, টিউলিপ ও লিলিয়াম ফুল বেশি দামে বিক্রি করছেন চাষিরা।

রবিবার সরেজমিনে গদখালী ফুলের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, হাজার হাজার ফুলে ছেয়ে গেছে বাজার। এর মধ্যে গোলাপ বেশি। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দামে গোলাপ বিক্রি করতে পেরে খুশি চাষিরা। গত দুই দিন দাম বেশি পাওয়ায় তাদের মুখে হাসি। সামনের দিনগুলোতে আরও বেশি দাম পাওয়ার আশা তাদের। 

গোলাপের দাম দ্বিগুণ

রবিবার এই বাজারে সাধারণ গোলাপের পিস বিক্রি হয়েছে ২৫-৩০ টাকায়। চায়না ও থাই গোলাপের পিস বিক্রি হয়েছে ৩৫-৪৫ টাকায়। কেউ কেউ ৫০ টাকাও পিস বিক্রি করেছেন। বিগত বছরগুলোতে সর্বোচ্চ ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল গোলাপ। এছাড়া রজনীগন্ধা ১৫, গ্লাডিওলাস ১৫-২২, সাদা গ্লাডিওলাস ২৫, জারবেরা ১২-১৫, চন্দ্রমল্লিকা দুই-তিন এবং গাঁদা ফুলের হাজার (বাসন্তী ও লাল) ৪০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অতীতে রজনীগন্ধা সর্বোচ্চ ১০, গ্লাডিওলাস ১০, জারবেরা ৮-১০ ও চন্দ্রমল্লিকা দুই-তিন টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এই হিসাবে এবার দ্বিগুণ দামে ফুল বিক্রি হচ্ছে।

১৬ কাঠা জমিতে গোলাপ চাষ করেছেন গদখালী ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের সুমন হোসেন। বেশি দামে গোলাপ বিক্রি করছি উল্লেখ করে এই চাষি বলেন, ‘রবিবার ৫০০টি গোলাপ এনেছি। ২৪ টাকা পিস দরে বিক্রি করেছি। উৎপাদন কম হলেও দাম বেশি পাওয়ায় আমি খুশি। 

বৃষ্টি ও প্রচণ্ড কুয়াশার কারণে গোলাপের পাপড়ি এবং পাতা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে এমন অবস্থা দেখে দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরে আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় আবারও কিছু গোলাপ ফুটেছে।’

নীলকণ্ঠনগর গ্রামের ৩০ শতক জমিতে গোলাপ চাষ করেছেন ইউনুস আলী। রবিবার গদখালী বাজারে ৫০০ পিস গোলাপ এনেছেন। প্রতি পিস ২২ টাকা দরে বিক্রি করেছি জানিয়ে ইউনুস বলেন, ‘গত শুক্রবার ৩০০ পিস ১৬ টাকা করে বিক্রি করেছিলাম। দিবসগুলো ঘিরে ফুলের দাম বাড়ছে। বাগানে আরও কিছু গোলাপ রয়েছে। আশা করছি, সামনের দিনগুলোতে বিক্রি করতে পারবো এবং লাভবান হবো।’

রবিবার সরেজমিনে গদখালী ফুলের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, হাজার হাজার ফুলে ছেয়ে গেছে বাজার

স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি দামে অর্থাৎ ২২ থেকে ৫০ টাকা পিসে গোলাপ বিক্রি হয়েছে বলে জানালেন গদখালী বাজারের ফুল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও ফুল চাষি। পানিসারা গ্রামে আমার গোলাপ বাগান আছে। 

এবার আবহাওয়াজনিত কারণে বেশ আতঙ্কে ছিলাম। কিন্তু এখন ফুলের দাম বাড়ায় স্বস্তিতে আছি। সোমবার ও মঙ্গলবার আরও দাম বাড়বে। আশা করছি, এবার বেশি লাভ হবে। কারণ বিগত বছরগুলোতে যে গোলাপ ১০-১৫ টাকায় বিক্রি করেছিলাম, এখন তার দাম ৩০ টাকার মতো।’

এক বিঘা জমিতে চায়না ও থাই গোলাপ চাষ করেছেন নীলকণ্ঠনগর গ্রামের রফিকুল হাসান। রবিবার ২০০ পিস চায়না ও থাই গোলাপ ৪৫-৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছি উল্লেখ করে এই চাষি বলেন, ‘এর আগের দিন শনিবার ২৫০ পিস ৪০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। আগামী কয়েকদিন দাম আরও বাড়বে বলে আশা করছি।’

বিগত বছরগুলোতে এসব দিবসে ১০-১৫ টাকা দরে গোলাপ বিক্রি করেছি জানিয়ে পানিসারা গ্রামের চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুই দিন আগেও ১০০ পিস গোলাপ এক হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি করেছি। তবে রবিবার ১০০ পিস তিন হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। দ্বিগুণ দাম পাবো আশা করিনি।’

১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা

মৌসুমের শুরুতে ফুলের বাজার জমে উঠেছে এবং দামও বেশি বলে জানালেন যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম। 

তিনি বলেন, ‘এবার ১০০ কোটি টাকার বেশি বিক্রির আশা ছিল। কিন্তু মাঝে বৈরী আবহাওয়া বিশেষ করে বৃষ্টি, কুয়াশা আর অতিরিক্ত ঠান্ডায় বেশ কিছু ক্ষেতের গোলাপ, গ্লাডিওলাস আর গাঁদা ফুল নষ্ট হয়েছে। 

তবে ইতোমধ্যে চাষিদের সেই অবস্থা থেকে মুক্তি মিলেছে। অনেক বাগানে নতুন করে ফুল ফুটেছে। সামনের দুই উৎসব ঘিরে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় দাম বেশি পাচ্ছেন। ফলে শীতের কারণে চাষিরা যে আতঙ্কে ছিলেন, তা কেটে গেছে। সর্বোচ্চ দামে গোলাপসহ অন্যান্য ফুল বিক্রি হওয়ায় আমরা খুশি। আশা করছি, চলতি মৌসুমে ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোরের প্রায় দেড় হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে প্রায় ছয় হাজার কৃষক ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত। দেশের মোট ফুলের চাহিদার ৭৪ শতাংশ এই জেলা থেকে সরবরাহ করা হয়। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস থেকে গদখালীর ফুলের চাহিদা ও বিক্রি বাড়তে থাকে। সেইসঙ্গে বাড়ে দামও।