বিশ্ববাজারে দাম কমছে, বাংলাদেশে উল্টো

টিবিটি ডেস্ক
টিবিটি রিপোর্ট
প্রকাশিত: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০১:১০ এএম

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও)তথ্য অনুযায়ী  ২০২৩ সালে বিশ্বে খাদ্যপণ্যের দাম আগের বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। তবে বাংলাদেশে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। এর কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে এখনও উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ডলারের বিনিময় হার এখনও ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।

যদিও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বৈশ্বিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। শিশু খাদ্য ও মাংসের দামের পতনের কারণে এফএও’র বিশ্ব মূল্যসূচক জানুয়ারিতে প্রায় তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে। 

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির পর গত জানুয়ারিতে এ সূচকের মান ছিল সর্বনিম্ন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে গম, ভুট্টা ও ভোজ্য তেলের দাম। কিন্তু বাংলাদেশের পাইকারি বাজারে দাম কমেছে সামান্যই। আর খুচরা পর্যায়ে এ মূল্যহ্রাসের কোনও প্রভাবই পড়েনি। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম গত দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমেছে।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স বলছে, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দুই উৎপাদক ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনায় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাতে দেশ দুটিতে সয়াবিন চাষ ত্বরান্বিত হয়েছে। 

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম ও গমের দাম ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের আগের অবস্থায় ফিরলেও দেশের বাজারে আটার দাম আগের অবস্থায় ফেরেনি। 

একইভাবে দেশের বাজারে ভোজ্য তেলের দামও আগের অবস্থায় ফেরেনি। ডলারের উচ্চমূল্য, ফ্রেইট চার্জ, এলসি খোলার জটিলতাসহ নানান কারণ এর জন্য দায়ী বলে মনে করছেন বেসরকারি আমদানিকারকরা।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি মাসে আটা, ময়দা ও ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী গত মাসে সাদা আটার (খোলা) দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। জানুয়ারি মাসে প্যাকেট আটার দাম বেড়েছে ৪.৩৫ শতাংশ। খোলা ময়দার দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আর প্যাকেট ময়দার দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। বাজারে এখন এক কেজির প্যাকেট আটার দাম ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা। প্যাকেট ময়দার দাম ৭০ থেকে ৭৫ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ স্থানীয়ভাবে চালের চাহিদার সিংহভাগ পূরণ করতে পারলেও গমের চাহিদা মেটাতে মূলত বৈশ্বিক বাজারের ওপর নির্ভর করতে হয়। বাংলাদেশের বার্ষিক গমের চাহিদা ৭০-৭৫ লাখ মেট্রিক টন, যার ৮৫ শতাংশ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত বছরের অক্টোবর মাসে প্রতিটন গমের দাম ছিল ২৬৬ মার্কিন ডলার, যা ২০২২ সালে ৩৭৮ ডলার ছিল। অবশ্য এর আগে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম ৪০০ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য গম। বার্ষিক ৭০ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ১০-১২ লাখ টন। বাকিটা আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়। অবশ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খাদ্যশস্যের সরকারি মোট মজুদ রয়েছে ১৬ লাখ ৫০ হাজার ২১২ টন। এর মধ্যে চাল রয়েছে ১৪ লাখ ২১ হাজার ৪৪৫ টন এবং গম ২ লাখ ১৮ হাজার ১০২ টন।

এদিকে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে গত সাত মাস ধরে মাংসের মূল্য সূচক অব্যাহতভাবে কমছে। গত ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারি মাসে এ হার ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। অথচ সরকারের বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে গত জানুয়ারি মাসে দেশের বাজারে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। বর্তমানে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। যদিও বাংলাদেশকে মাংস আমদানি করতে হয় না।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমলেও ডলারের বিনিময়ে হার দেশের বাজারকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে। 

ফলে বাংলাদেশ হয়তো এখন এর সুফল পাবে না। এছাড়া বাংলাদেশের বাজার এমন পরিস্থিতিতে চলে গেছে যে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে এর প্রভাব বাংলাদেশের বাজারে পড়ে না। 

কারণ আমদানি হয়ে যখন ভোক্তা পর্যায় আসে তখন মধ্যসত্ত্বভোগীরা বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এ কারণে আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ হলেও  বাজার ব্যবস্থাপনায় নজর দেওয়া খুব বেশি জরুরি।

অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ বলেছেন মূল্যস্ফীতি কমে আসতে আরও অন্তত ছয় মাস সময় লাগবে। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি থাকলেও বাংলাদেশে এখন উৎপাদন ও পরিবহন খরচ তুলনামূলক বেশি। 

এই খরচ কমাতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ডিজেলের দাম কমানো দরকার। সরকারের পক্ষে সেটি করা অসম্ভব। এছাড়া, আমদানি বাড়িয়ে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমেও দাম কমানো সম্ভব; কিন্তু  ডলারের সংকটে ব্যবসায়ীরা সহজে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছেন না। ডলারের বাড়তি দামের কারণেও খরচ বেড়েছে। এর বাইরে কিছু কিছু পণ্যে উচ্চ হারে শুল্ক-কর রয়েছে, যা কমানো দরকার। কিন্তু সেটাও অসম্ভব।