টাকা-ডলার অদলবদল সুবিধা
বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা–ডলার অদলবদল (সোয়াপ) সুবিধা চালুর ফলে বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ৩৭ কোটি ডলার জমা দিয়ে সমপরিমাণ টাকা নিয়েছে। এর ফলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোট রিজার্ভ বেড়েছে ৩৭ কোটি ডলার। অবশ্য গত সপ্তাহে ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, আবার বিক্রিও করেছে।
এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ১১০ টাকা দরে ব্যাংকগুলো প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কিনছে। এই দামে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার অদলবদল করেছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার নিয়ে সমপরিমাণ টাকা দিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বেশকিছু ব্যাংক ডলার জমা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছে। এসব ডলার জমার কারণে রিজার্ভ বেড়েছে। সামনে সেই ডলার ফেরত নিলে রিজার্ভ হয়তো কমতে পারে; তবে এর মধ্যে বিভিন্নভাবে রিজার্ভ বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৫০৮ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী এ রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৯৯৫ কোটি ডলার। ১৪ ফেব্রুয়ারি মোট রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৫০৫ কোটি ডলারে।
আর বিপিএম৬ অনুযায়ী, ওই দিন রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৯৯৩ কোটি ডলার। এরপর ২০ ফেব্রুয়ারি মোট রিজার্ভ বেড়ে ২ হাজার ৫৩২ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। আর আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, ওই তারিখে রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ১৯ কোটি ডলার।
১৫ ফেব্রুয়ারি টাকার সঙ্গে ডলার অদলবদল বা সোয়াপব্যবস্থা চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন এ ব্যবস্থার ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ডলার–টাকা অদলবদল করতে পারছে। সর্বনিম্ন ৭ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য টাকা-ডলার অদলবদলের এ ব্যবস্থা চালু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ সুবিধা চালুর পর গত মঙ্গলবার কয়েকটি ব্যাংক ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়ে সমপরিমাণ টাকা নিয়েছে। গতকালও কয়েকটি ব্যাংক মিলে বাংলাদেশ ব্যাংকে ১৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার জমা দিয়ে তার বিপরীতে সমপরিমাণ টাকা নিয়েছে। এর বাইরে গত সপ্তাহে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ১০ কোটি ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সময়ে আমদানি দায় মেটাতে সমপরিমাণ ডলার বিক্রিও করেছে।
গত দুই বছর ধরে দেশে ডলার–সংকট চলছে। এর ফলে রিজার্ভ কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। ডলার–সংকট সামাল দিতে আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তাতে চাহিদা কিছুটা কমলেও ডলারের সংকট এখনো পুরোপুরি কাটেনি। ফলে আমদানি দায় মেটাতে এখনো প্রতি ডলারের জন্য ১২৩ টাকা পর্যন্ত দাম দিতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। আবার কিছু ব্যাংক ঘোষণার চেয়ে বেশি দাম দিয়ে প্রবাসী আয়ের ডলার কিনছে।
ডলারের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংকে টাকারও সংকট চলছে। কারণ, ব্যাংকগুলোকে নগদ টাকা দিয়ে ডলার কিনতে হচ্ছে। আবার অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেও তারল্যসংকটে পড়েছে কিছু ব্যাংক। তবে কোনো কোনো ব্যাংকের কাছে বাড়তি কিছু ডলারও রয়েছে। সেসব ডলার এখন তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়ে তার বিপরীতে সমপরিমাণ টাকা নিচ্ছে।
ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, টাকা–ডলার অদলবদলের এ ব্যবস্থা উভয় পক্ষের জন্যই লাভজনক। কারণ, উদ্বৃত্ত ডলারের বিপরীতে ব্যাংকগুলো তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পেয়ে যাবে। আবার নির্ধারিত সময় পর টাকা ফেরত দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সমপরিমাণ ডলার পেয়ে যাবে। এ ব্যবস্থার আওতায় সর্বনিম্ন ৫০ লাখ ডলার বা তার সমপরিমাণ টাকা অদলবদল করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ ব্যাংকগুলোর সাধারণ ব্যাংকিং থেকে অফশোর ইউনিটে ডলার স্থানান্তর বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি মূল ব্যাংক থেকে অফশোর ইউনিটে যে অর্থ দেওয়া হয়েছে, তা-ও চলতি বছরের মধ্যে ফেরত আনতে বলা হয়েছে।
অফশোর ব্যাংকিংয়ে ডলার স্থানান্তর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো ব্যবসার জন্য বিদেশি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে যে ডলার ধার এনেছে, তা ব্যবহার করতে পারছে না। এখন এসব ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিয়ে টাকা নিয়ে সেই অর্থ ঋণ হিসেবে দিতে পারছে ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলারের জমা হওয়ায় বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও।