পড়ে রইল ভিসা-পাসপোর্ট

আগুন কেড়ে নিল পুরো পরিবারকে

টিবিটি ডেস্ক
টিবিটি রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৪৮ পিএম

আর কিছুদিন পরই পুরো পরিবার নিয়ে ইতালিতে যাওয়ার কথা ছিল সৈয়দ মোবারক হোসেনের। দেশ ছাড়ার আগে স্ত্রী-ছেলে-মেয়েকে নিয়ে একসঙ্গে খেতে গিয়েছিলেন রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজে বিরিয়ানির দোকান কাচ্চি ভাইয়ের শাখায়।

পরিবারের সবাইকে নিয়ে সেখানেই যাওয়াই কাল হল মোবারক হোসেনের। এই পরিবারের পাঁচজনের সবাই এখন লাশ।

শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই পরিবারের পাঁচজনের লাশ বুঝে নিতে এসে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ কথা বলছিলেন মোবারকের দুলাভাই সৈয়দ গাউসুল আজম।

তিনি বলেছেন, মোবারক হোসেন বেশ কয়েক বছর ধরে ইতালিতে প্রবাসী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়; দুই মেয়ে সৈয়দা কাসফিয়া, সৈয়দা নূর এবং ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহকে নিয়ে মোবারকের স্ত্রী স্বপ্না থাকতেন ঢাকার মধুবাগে।

কিছুদিন আগে ইতালিতে গ্রিন কার্ড পেয়ে সবাইকে সেখানে নিয়ে যেতে দেশে আসেন মোবারক হোসেন। তাদের ইতালি যাওয়ার ফ্লাইট ছিল চলতি মাসের ১০ তারিখে।

সৈয়দ গাউসুল আজম বলেন, “ভিসা-পাসপোর্ট সব রেডি। কিছুদিন পরই তাদের ইতালির ফ্লাইটে চড়ার কথা ছিল। যাওয়ার আগে সবাই মিলে খাওয়া-দাওয়া করতে কাচ্চি ভাইয়ে গিয়েছিল। মোবারক তার ছোট ভাইকেও যেতে বলেছিল। গেলে হয়ত আজকে সেও লাশ হয়ে ফিরতে হত।

“আমি শুনেছি সিড়িতে নাকি সিলিন্ডার গ্যাস রেখেছে। এগুলোর বিস্ফোরণে আগুন আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। আমি আশা করব, এগুলো নিয়ে সরকার যেন কঠিন পদক্ষেপ নেয়, যাতে আর কোনো পরিবারের এমন ক্ষতি না হয়।”

সবাইকে গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দাফন করা হবে বলে জানান গাউসুল আজম।

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনটিতে আগুন লাগে। ভবনটির দ্বিতীয় দোতলায় ছিল বিরিয়ানির পরিচিত খাবার দোকান ‘কাচ্চি ভাই’ এর শাখা, পোশাকের ব্র্যান্ড ইলিয়েন, নিচের তলায় স্যামসাং এর শোরুমসহ আরও বেশ কিছু দোকান। 

স্যামসাংয়ের শোরুমের পাশে রয়েছে একটি কফি শপ। এরকম কফির দোকানসহ ফাস্টফুডের অনেকগুলো দোকান ও রেস্তোরাঁ রয়েছে ভবনটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে।

প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন নিভিয়ে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। এরপরই আসতে থেকে একের পর এক মৃত্যুর খবর।

ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া ৪৪ জনের মধ্যে থেকে ২৩ জনের মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকব্রিগেডিয়া জেনারেল মঈন উদ্দিন প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে চুলা বা গ্যাস লিকেজ থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে বলে ধারণার কথা বলেছেন। ভবনটির প্রতিটি ফ্লোরেই গ্যাসের সিলিন্ডার ছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি। 

র‍্যাব-৩ এর এএসপি কামরুল হাসান প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছিলেন, স্যামসাং শোরুমের পাশের কফি হাউস থেকে প্রথম আগুনের সূত্রপাত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা নিচ থেকে আগুন উপরের দিকে উঠতে দেখেছেন। প্রথমে দোতলায় তারপর তা পুরো ভবনে ছড়িয়ে যায়।