১ মার্চ থেকে নতুন বাজার ব্যবস্থাপনা: টিটু
আগামী ১ মার্চ থেকে নতুন বাজার ব্যবস্থাপনার দেখা মিলবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
তিনি জানিয়েছেন, ট্যারিফ কমিশনের সভা করে ভোগ্যপণ্যের মূল্য ঠিক করে দেওয়া হবে।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “মনিটরিং এমন করতে চাই, শুধু রোজায় নয়- সারাবছর যেন বাজার স্থিতিশীল থাকে৷ আমরা সব জায়গায় জবাবদিহিতা নিয়ে আসব। কৃষি বিপণণ আইন আছে। এই আইনটা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এসেনশিয়াল কমোডিটি অ্যাক্ট আছে, মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করতে পারছি না।
“খাদ্য অধিদপ্তরের একই রকম একটা আইন আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই তিনটা আইনকে সমন্বয় করে দৃশ্যমান করব। ১ মার্চ থেকে নতুন বাজার ব্যবস্থাপনার দিক নির্দেশনা পাবেন।”
বৃহস্পতিবার বিকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। এসময় এফবিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপপ্তরের মহাপরিচালক এইচ এম শফিকুজ্জামান, খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল বশরসহ ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, “বাজারে কিছু সমস্যা আছে, মূল সমস্যা স্বচ্ছতার। আমাদের স্বচ্ছতার অভাব আছে। আমরা করি সবকিছুই, কিন্তু লুকোচুরির একটা অভ্যাস আছে। কাউকে দায়ী করব না। সবাইকে নিয়েই কাজটা করতে হবে।”
ভোগ্যপণ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আগামী সপ্তাহের মধ্যে ট্যারিফ কমিশনের মিটিং করে মূল্য নির্ধারণ করে দিব, যা ভোক্তার সহনীয় হবে এবং ব্যবসায়ীদের কাছেও গ্রহণযোগ্য হবে।
“এবার ১৩ লাখ ৫০ হাজার টন খাদ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। গত বছরের চেয়ে ৩ লাখ টন বেশি। ১৮ লাখ টন খাদ্য শস্য দেশে আছে। আরো আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
প্রতিমন্ত্রী টিটু বলেন, “আমরা কোনো দাম চাপাইয়ে দিব না। কৃষি পণ্যের দাম যদি যৌক্তিক পর্যায়ে না থাকে- কৃষক বাঁচবে না। পেঁয়াজ নিয়ে আমরা একটু কষ্টে আছি। কিন্তু আমরা মনিটরিং রাখছি এটা মধ্যস্বত্বভোগী নিচ্ছে, না উৎপাদনকারী পাচ্ছে।
“আজকে কিন্তু পেঁয়াজের মূল্য কৃষক পাচ্ছে। ২০-২৫ জেলার হাটে পেঁয়াজের মূল্য আমরা মনিটরিং করছি। এখন মূল্যটা হাট-বাজারে কৃষকরা পাচ্ছে। আগামী বছর কিন্তু উৎপাদন দ্বিগুণ হবে।”
পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, “পণ্যের বাজার আমরা সারা বছরই নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ রাখতে চাই। আমরা ভোক্তা অধিকারকে দিয়ে কোনো রকম হয়রানি বা পুলিশিং করতে চাই না।
“স্বাধীন দেশে ব্যবসায়ীরা তাদের জায়গা থেকে দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করবেন, আশা করি।”
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রী সরাসরি আমার সাথে কথা বলেছেন। উনি কমিটমেন্ট দিয়েছেন যে রমজানের আগেই আমরা পেঁয়াজ এবং চিনি দুটোই ভারত থেকে স্থল পথে আনতে পারব। বাইরে থেকেও আমরা আনতে পারি।”
তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীরা সেলফ রেগুলেটরি। কিন্তু একজন খারাপ ব্যবসায়ীর জন্য ৯৯ জন কষ্ট পায়। ভোজ্যতেলে ৬ টাকা ট্যারিফ পার লিটারে কমানো হয়েছে। এখন ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ অজুহাত অনেক আছে, সদিচ্ছাটা বড়।
এর আগে সকালে নগরীর মাদারবাড়ি এলাকায় টিসিবি’র খাদ্য পণ্য বিক্রি কর্মসূচি উদ্বোধন করে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী টিটু বলেন, “কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সবসময় থাকবে, যারা ব্যক্তি স্বার্থে কাজ করে। যারা মানুষের দুঃখকে পুঁজি করে ব্যবসা করতে চায়। আমরা সেইসব মজুতদারের বিরুদ্ধে। শক্ত অবস্থান ঘোষণা করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
“আমরা প্রশাসনকে অনুরোধ করব, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে কোনো ব্যবসায়ী বা কোনো সিন্ডিকেট যেন কোনোভাবে কারসাজি করার সুযোগ না পায়। আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনোভাবে যেন অসাধু ব্যবসায়ীরা খাদ্যের কোনো কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে, সেজন্য সচেষ্ট আছি।”
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এই বিশেষ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল কোভিডের মধ্যে। তখন ট্রাকে ডিস্ট্রিবিউশন হত। এখন একটা স্থানে হয়। অনেকে মাইগ্রেশন করে অন্য জায়গায় চলে গেছে কার্ডধারী। অনেকে বাদ পড়েছে। অনেকে হয়ত একাধিক সুবিধা পায়।
“এই তালিকাটা নতুন করে সমন্বয় করার জন্য আগামী সপ্তাহে ডিসির মাধ্যমে নির্দেশনা দেব। জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নতুন তালিকা হালনাগাদ করা হবে। আগামী অর্থবছর ১ জুলাই থেকে নতুন তালিকা অনুসরণ করা হবে।”
টিটু বলেন, “আর ডিলারদের যেন ঘুরে ঘুরে না দিতে হয়. স্থায়ী ডিলারের নিয়োগের মাধ্যমে যাতে রাস্তায় সারাদিন নষ্ট করে...। এক প্যাকেট খাবারের জন্য সারাদিন নষ্ট হয়ে যায়। আপনারা যেন সুবিধামত সময়ে দোকান থেকে নিতে পারেন, সে ব্যবস্থা চালুর জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
দুপুরে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, “যেটা আপনারা জানালেন, সাপ্লাই চেইনে ইন্টারপশান আপনারা করেন না।
আমদানিকারকরা এবং মিল মালিকরা করে। কিন্তু আপনাদের দায়িত্ব, যখন বন্ধ করে ইনফরমেশনটা আমাকে জানানো। যখনই কেউ ইন্টারপশান করবে, সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানাবেন।
“ভোক্তা অধিদপ্তর কোনো ব্যবসায়ীকে হয়রানি করবে না। রমজান মাস উপলক্ষে খাতুনগঞ্জের কোনো ব্যবসায়ী হয়রানির শিকার হবে না। কিন্তু আপনাদের তথ্যটা সঠিক দিতে হবে।”